বোরজাহ ইয়ানকি: হাসি দিয়ে বিশ্বজয়!
হাসি দিয়ে নাকি বিশ্ব জয় করা যায়। বোরজাহকে দেখে এই কথাটাকে সত্যি মনে হবে যে কারো। জীবনটাকে যিনি উপভোগ করার জন্য বাঁচেন, যে লোকটা নিজের হাসি আর খুশিটা সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে চান- তাকে ভালো না বেসে উপায় আছে?
বোরজাহ ইয়ানকি: হ্যাপিয়েস্ট গাই অন দ্য আর্থ
আফ্রিকান বংশোদ্ভূত এই তরুণের নাম তার বোরজাহ ইয়ানকি। তার বাবা-মা কানাডায় এসেছিলেন ঘানা থেকে, তবে তার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা কানাডার উইনিপেগ- এ। বোরজাহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটক আর ফেসবুকে সক্রিয়। এই দুটো প্ল্যাটফর্ম মিলিয়ে তার প্রায় সাড়ে আট লাখ ফলোয়ার। সেখানে তিনি ইদানিং বাংলা কিছু ‘জনপ্রিয়’ সংলাপের মিমিক্রি করে আপলোড করছেন। ভাঙা ভাঙা বাংলায় কখনও তার মুখে শোনা যাচ্ছে ‘আকাশ ভরা তারা, **** সারা’, কখনও বা বলছেন ‘আমরা করোনার চেয়েও শক্তিশালী’, কখনও ‘আহো ভাতিজা আহো’ বলে ডায়লগ ঝাড়ছেন তো পরদিন আবার মাহফুজুর রহমানের গানের লাইন রিডিং পড়ছেন।আর এটা করেই বাংলাদেশী ফেসবুক ইউজারদের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়ে গেছেন এই তরুণ। ফেসবুকের নিউজফিড জুড়ে এখন কেবল বোরজাহ ইয়ানকিকেই দেখি। বন্ধুরা তার ভিডিও শেয়ার করছেন, ভীনদেশী একটা লোক তাদের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে, আনন্দ দিচ্ছে কয়েকটা সেকেন্ডের জন্য, তাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে চারপাশে। বোরজাহ ইয়ানকি নামের মানুষটা কি জানেন, হুট করে একদম ভিন্ন গোলার্ধের কিছু মানুষ যে তাকে ভালোবেসে ফেলেছেন?
ফেসবুকের কমেন্টবক্সের মন্তব্যগুলো পড়লেই বোরজাহ’র জেনে যাওয়ার কথা সেটা। বাংলা ভাষাটা তিনি কোত্থেকে শিখেছেন, সেটা সম্পর্কে পরিস্কার কোন তথ্য নেই, অনেকের ধারণা, তার কোন বাংলাদেশী প্রতিবেশি হয়তো মজার ছলে তাকে এসব কথা শিখিয়ে ভিডিও বানাতে উদ্বুদ্ধ করছে। সেরকম কিছু ঘটার সম্ভাবনাই বেশি, নইলে বাংলাদেশ বা বাংলা ভাষার প্রতি বোরজাহ’র আগ্রহ তৈরী হবার কথা নয়, লিজেন্ডারি এসব সংলাপের খোঁজ বের করাটাও তার একার পক্ষে অসম্ভব।বোরজাহ সম্ভবত গোমড়া মুখে থাকতেই পারেন না
এই লোকটা সারাক্ষণ হাসিমুখে থাকেন, মনে হয় না বিরক্তি কখনও তার মধ্যে বাসা বাঁধতে পেরেছে। জীবনটাকে বোরজাহ যেভাবে দেখেন, তাতে হতাশা জিনিসটা তাকে আক্রমণ করতে পারবেও না। তার চোখে সফলতার সংজ্ঞা হচ্ছে সুখী থাকা, সিক্স ডিজিট স্যালারি বা সুন্দরী প্রেমিকা জোটানো নয়, অডি বা বিএমডাব্লিউর লেটেস্ট ভার্শনের গাড়ির মালিক হওয়াটাও নয়। নিজেই নিজেকে সুখী মানুষ হিসেবে দাবী করেন, আর বলেন, জীবনটা খুব ছোট, দুঃখ-শোকে কাটানোর কোন মানে নেই।সবাইকে হাসি-আনন্দে মাতিয়ে রাখা বোরজাহ স্কুল লেভেলে অসাধারণ অ্যাথলেট ছিলেন, কানাডিয়ান জুনিয়র সামার মিটে জ্যাভেলিন থ্রো- বিভাগে রেকর্ডও করেছিলেন। একসময় পার্ট টাইম জব হিসেবে ন্যানি/বেবিসিটারের কাজ করতেন। অলিম্পিকে খেলার স্বপ্ন দেখেন তিনি, সপ্তাহে পাঁচদিন প্র্যাকটিস করেন। বোরজাহ নিশ্চিত, একদিন তিনি কানাডার পতাকা গায়ে জড়িয়ে অলিম্পিকে নামার সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি আরেকটা স্বপ্ন আছে বোরজাহ’র, ফিল্ম এবং ভিডিও মেকিং নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা তার। টিকটক বা ইউটিউবে ভিডিও বানানোটা সেই ইচ্ছেগুলোরই কুঁড়ি। ফুল হয়ে নিশ্চয়ই একদিন ফুটবেন তিনি।হাসি দিয়ে নাকি বিশ্ব জয় করা যায়। বোরজাহকে দেখে এই কথাটাকে সত্যি মনে হবে যে কারো। তিনি কৌতুক বলেন না, স্ট্যান্ডআপ কমেডি করেন না, ভাঙা ভাঙা শব্দে নানা ভাষায় শুধু সংলাপ বলে যান হাসিমুখে। কখনও নাইজেরিয়ার ভাষায়, কখনওবা বাংলায়। তাতেই মানুষজন হুমড়ি খেয়ে পড়ছে, তাকে পছন্দ করে ফেলছে। এই মুহূর্তে কানাডার অন্যতম সেরা সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে ধরা হচ্ছে তাকে, শুধু হাসি দিয়েই এই অসাধ্য সাধন করেছেন তিনি। কানাডা, আফ্রিকা, বাংলাদেশ- সব জায়গাতেই তিনি জনপ্রিয়।বোরজাহ ইয়ানকির ফেসবুক পেজের কভার ফটো
নিজের ফেসবুক পেজের কভারে বোরজাহ লিখে রেখেছেন, ‘মেক দ্য ওয়ার্ল্ড স্মাইল’। পুরো দুনিয়াকে তিনি হাসাতে চান, যে অমলিন হাসিটা তার মুখে ঝুলে থাকে, সেটাকে তিনি ছড়িয়ে দিতে চান আট বিলিয়ন মানুষের মধ্যে। অনেকেই বোরজাহ’র শব্দচয়নে বিরক্ত হতে পারেন, আমি হই না। কারণ আমি জানি, তিনি এসব শব্দের মানেও বোঝেন না। তিনি শুধু চাইছেন মানুষকে হাসাতে, যে হাসিটা আমাদের মুখ থেকে হারিয়ে গেছে। যান্ত্রিক জীবনের যাঁতাকলে পড়ে হাসতে ভুলে যাওয়া আমাদের মুখে কয়েক সেকেন্ডের জন্য হাসি ফুটছে যে মানুষটার কল্যানে, তাকে আমি দেবদূতের চোখে দেখি।কিছুদিন পরপর সমীক্ষা হয়, পত্রিকায় পড়ি, ঢাকা শহরের আশি-নব্বইভাগ লোক মনের অসুখে ভুগছেন। জীবন, সংসার, পরিবার, ক্যারিয়ার- সবকিছু নিয়ে আমরা এত বেশি চাপ নিয়ে ফেলছি, কখন যে হতাশার চোরাবালিতে ডুবে যেতে শুরু করেছি আমরা নিজেরাই জানি না। বিষণ্ণতা, অবসাদ, ক্লান্তি- এগুলো এখন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, রোজ কারো না কারো আত্মহত্যার খবর আসে। এর মাঝখানে বোরজাহ ইয়ানকির মতো মানুষগুলোকে ভীনগ্রহের প্রাণী বলে মনে হয়। জীবনটাকে যিনি উপভোগ করার জন্য বাঁচেন, যে লোকটা নিজের হাসি আর খুশিটা সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে চান- তাকে ভালো না বেসে উপায় আছে?
কোন মন্তব্য নেই